মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী 

করোনা সংক্রামন প্রতিরোধের প্রধান উপায় হলো-সর্বোচ্চ সামাজিক ও শারীরিক দুরত্ব বজায় রাখা। এটা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বাংলাদেশ সরকার, দেশের স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে স্বীকৃত। যা পালনে সরকার নির্দেশনা জারি করেছে এবং তা বাস্তবায়নে সরকার মাঠে শুরু থেকে কঠোরভাবে কাজও করছে।

মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন অধিশাখা থেকে ৪মে উপসচিব মোঃ ছাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ৯৪ নাম্বার স্মারকে জারীকৃত এক আদেশে আগামী ১০মে থেকে সীমিত আকারে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত শপিং মল, মার্কেট, হাট-বাজার খোলা রাখতে মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যদিও একইদিন একই বিভাগ থেকে ৯২ নাম্বার স্মারকে পৃথক আরেকটি আদেশে খোলা রাখার এ সময় বিকেল ৪টা পর্যন্ত বলা হয়েছে।

বিগত প্রায় দেড় মাস ধরে দেশে সাধারণ ছুটি চলছে। সাধারণ ছুটি চলাকালে Stay Home অর্থাৎ মানুষকে ঘরে রাখতে দেশের আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন, সেনাবাহিনী প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। ভয়ংকর করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে কক্সবাজার সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় লকডাউন (Lockdown) চলছে। যদিও আমি নিজে লকডাউন এর আসল ‘সংজ্ঞা’ টা কি সেটা এখনো বুঝে উঠতে পারিনি। এ অবস্থায় শপিং মল, মার্কেট, হাঠ-বাজার গুলো উম্মুক্ত করে দেওয়ার ঘোষণায় সোমবার ৪ এপ্রিল শেষ বিকেল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। সবাই বলছে, দেশে করোনা সংক্রমণের হার হার দিন দিন বাড়ছে আশংকাজনক হারে। এ অবস্থায় আরো কিছুদিন সারাদেশে অঘোষিত লকডাউন থাকা উচিত ছিলো। সামাজিক ও শারীরিক দুরত্ব মানার ব্যাপারে সরকারি তৎপরতা আরো বাড়ানো প্রয়োজন ছিলো। মানুষকে জোর করে হলেও Stay Home অর্থাৎ ঘরে থাকতে বাধ্য করতে হতো। কিন্তু তা নাকরে সরকার শপিং মল, মার্কেট, হাঠ-বাজার গুলো উম্মুক্ত করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এনিয়ে সবাই বলছে, জীবন বড়, নাকি জীবিকা বড়। ঈদের শপিং কোন অত্যাবশ্যকীয় বিষয়। কোন ধর্মীয় বিষয় নয়। কিন্তু এ শপিং করতে গিয়ে আমরা কতটুকু সচেতনতার সাথে চলাচল করতে পারবো, সেটা সম্পূর্ণ প্রশ্নবিদ্ধ বিষয়। দীর্ঘদিন শপিংমল গুলো বন্ধ ছিলো, আবার ঈদের মাত্র ১৩ দিন আগে খুলে দেওয়া হচ্ছে, দৈনিক মাত্র ৬/৭ ঘন্টা খোলা রাখা যাবে। এসব বিষয় বিবেচনায় সবার ধারণা, শপিং মল গুলোতে তখন মানুষের ঢল নামবে। সেখানে সামাজিক ও শারীরিক দুরত্ব বজায় রাখা তো দুরের কথা, প্রতিটি শপিং মল বিশাল বিশাল এক একটা জনসভায় পরিনত হবে।

শপিং মল, মার্কেট, হাঠ-বাজার গুলো না খুললে শুধুমাত্র মুষ্টিমেয় কিছু ব্যবসায়ী, পাইকার, কারখানার মালিক সাময়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কিন্তু খুললে লক্ষ লক্ষ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আশংকা খুশী বেশি। আবার অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত যদি শপিং মল, মার্কেট খোলা রাখা যায়, তাহলে মসজিদ গুলোতে মুসল্লীর সংখ্যা কেন সীমিত থাকবে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অফিস, আদালত, গণপরিবহন কেন বন্ধ থাকবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ধরনের প্রশ্নের উপর প্রশ্ন করছে সবাই। ক্ষোভের বর্হিপ্রকাশ ঘটাচ্ছেন সবাই।

শপিং মল, মার্কেট, হাঠ-বাজার গুলো খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে সকলে চরম আত্মঘাতী ও অযৌক্তিক একটি সিদ্ধান্ত বলে অভিহিত করছেন সকলে। শপিং মল, মার্কেট, হাঠ-বাজার গুলো খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তের পক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি স্ট্যাটাসও আমার চোখে পড়েনি। আদালত সীমিত আকারে খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষ সরে এসেছেন। এই সরে আসার সিদ্ধান্তকে সবাই সাধুবাদ জানিয়েছেন।

তাই সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলের কাছে অনুরোধ রাখবো, দেশের আমজনতার হৃদয়ের আওয়াজ শুনতে চেষ্টা করুন। আবার সুবিবেচনা করুন শপিং মল, মার্কেট, হাঠ বাজার গুলো খোলার সিদ্ধান্ত কতটুকু যৌক্তিক হয়েছে। আগামী ১০মে থেকে শপিং মল, মার্কেট খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাই সময় থাকতে শপিং মল, মার্কেট খুলে দেওয়ার এই সিদ্ধান্ত পুণর্বিবেচনা করে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত থেকে দ্রুত সরে আসুন। নাহয়, দেশ, জাতি ও সরকারকে শপিং মল, মার্কেট খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তের জন্য চরম মাশুল দিতে হবে। হয়ত এমনো হতে পারে, বৈশ্বিক মহামারী ভয়ংকর করোনা পরিস্থিতি বাংলাদেশে এমন অনিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে চলে যাবে, যখন আর কারো কিছুই করার থাকবে না। তাই দেশের নীতিনির্ধারণী মহলের কাছে আবারো নিবেদন করবো, সবার মঙ্গলের কথা বিবেচনায় এনে শপিং মল, মার্কেট খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে দ্রুত সরে আসুন। নাহয় প্রকৃতিই এ আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের চরম প্রতিশোধ নেবে।

(লেখক : আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, ঢাকা।)